রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬

বড় ভাই লেখা একটু পড়ে দেখুন ৷৷৷৷৷৷

একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার হচ্ছে 'If you change your attitude, your life will be change'. অর্থ্যাৎ আপনি যদি আপনার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে পারেন তাহলে আপনার জীবনটা নাটকীয়ভাবে বদলে যাবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি, মানসিকতা বা মনোভাব দুই ধরণের হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে ইতিবাচক মনোভাব এবং অপরটি নেতিবাচক মনোভাব। ইতিবাচক মনোভাব যেমন মানুষকে তার উন্নতির চরম শিখরে পৌছে দেয়, তেমনি নেতিবাচক মনোভাব মানুষের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতকে অঙ্কুইে বিনষ্ট করে দেয়। দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের মধ্যে কতটা প্রভাব ফেলে তা নিম্নোক্ত ছোট গল্পের মাধ্যমে অনুধাবন করা যায়।
আমেরিকাতে একজন ডাক্তারকে মদ্যপানে আসক্ত একদল মানুষের সভায় বক্তৃতা দিতে আহ্বান করা হয়েছিল। মদ্যপান মানব স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর তা প্রমান করার জন্য তিনি একটি বাস্তবিক পরীক্ষা করে বোঝাতে চেয়েছিলেন। তিনি দুটি পাত্রের একটিতে পানি এবং অপরটিতে মদ রাখলেন। তারপর পানির পাত্রে কয়েকটি কেঁচো ছেড়ে দিলেন, কেচোগুলো বেশ নড়েচড়ে পানিতে ভেসে বেড়াতে লাগলো। তারপর পানির পাত্র থেকে কেচোগুলোকে তিনি মদের পাত্রে রাখলেন, প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কেচোগুলো টুকরো টুকরো হয়ে মদের সাথে মিশে গেল। 
তারপর তিনি শ্রোতাদের জিজ্ঞেস করলেন এই পরীক্ষার দ্বারা আপনারা কি বুঝতে পারলেন? পেছন থেকে মদ্যপানে আসক্তদের একজন বলে উঠলেন 'মদ খেলে আমাদের পেটে কৃমি হবেনা'। নিশ্চই এটি ডাক্তারের প্রতিপাদ্য ছিলনা। কিন্তু শ্রোতাদের কেউ কেউ তাদের মানসিক প্রবণতা অনুযায়ী নিজ নিজ অর্থ করে নিয়েছে। এই গল্পের নৈতিকতা হচ্ছে কিছু কিছু মানুষ তার স্বভাবজাতভাবেই নেতিবাচক মনোভাব পোষন করে থাকে।
আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ভুল ধারণা হচ্ছে আমরা অনেক সময় ভাবি পৃথিবীটাকে এক নিমিষেই বদলে দিব। আমি মনে করি এর চেয়ে বরং নিজেকে বদলে ফেলাই শ্রেষ্ঠতর। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে হতাশার কারণ হচ্ছে আমাদের সমাজের পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং আস্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা তথাকথিত শুভাকাঙ্খী যারা অনুপ্রেরণার বদলে পিছিয়ে দিতেই বেশী সহযোগিতা করে। আসলে আমরা কেউই এখনও কাকড়াচক্র থেকে বের হতে পারছিনা।
আমাদের আশেপাশের লোকজন আমাকে /আপনাকে শ্রমিকের ছেলেকে শ্রমিক হিসেবেই দেখতে চায়। এ প্রসঙ্গে একটি যর্থাথ উদাহারণ রযেছে।
এক বনমুরগীর বাসায় একটি ঈগলের ডিম রাখা হয়েছিল। বনমুরগী ডিমে তা দিয়ে যে বাচ্চা ফুটাল, সেটি বনমুরগী বলেই পালিত হতে থাকলো। ক্রমে ক্রমে সেই  ঈগলের বাচ্চা ঈগলের মত দেখতে হলেও আদতে বনমুরগির স্বভাবই পেল। সে খাবারের জন্য আস্তাকুড়ে আচড়াতো এবং বনমুরগীর মতই ডাকতো। বনমুরগী বেশী উড়তে পারেনা। একদিন সে একটি ঈগলকে আকাশের বুকে বীরদর্পে উড়তে দেখল। তখন সে তার সঙ্গীদেরকে জিজ্ঞাসা করলো এই পাখিটির নাম কি? সঙ্গীরা বলল এটি ঈগল পাখি, অসাধারণ সুন্দর এই পাখি। তুমি তার মত দেখতে হলেও তার মত করে উড়তে পারবেনা। কারণ তুমি এখন বনমুরগী হয়ে গেছো। তখন সেই ঈগলের বাচ্চা বনমুরগীদের কথা সত্য মনে করে বনমুরগীর মতই জীবনযাপন শুরু করে একদিন ভবলীলা সাঙ্গ করলো। বেচারা জানলইনা সে আসলে একটি ঈগল ছিল। সে জন্মেছিল ঈগল হয়ে কিন্তু তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা তাকে ঈগল হয়ে বাচতে দিলনা। অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে উপরের ঘটনাটি ধ্রুব সত্য। তাই মানসিকতা এমন এক শক্তি যার দ্বারা আপনি পৃথিবীকে বশ করতে পারেন এবং নেতিবাচক মানসিকতার ফলে পৃথিবীর পদতলে পিষ্ট হতে পারেন।
নেতিবাচক মানুষ সবসময় আপনার সমালোচনা করবে। সমালোচনাই তাদের জীবীকা। তারা প্রয়ই মানুষের লক্ষ্য ও একাগ্রতা নিয়ে সমালোচনা করেন। প্রতিটি মানুষের মাঝেই তারা সম্ভাবনার বদলে ত্রুটি খুজে বেড়াই। এই ধরণের মানুষকে বলা হয় শক্তিশোষক। এরা চায়ের দোকানে কিংবা ক্যাফেটারিয়াতে ক্লান্তি অপসারণের নামে কয়েক কাপ চা গলাধঃকরণ করেন, ধুমপানের নামে বিষপান করেন  এবং মানুষের অজস্র নিন্দামন্দ করেন। তারা শুধু নিজেদের মধ্যেই নন আশেপাশের সবার মাঝেই একটি চাপা উত্তেজনার সৃষ্টি করেন।
জেমস ওয়াটস যখন বাষ্পিয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছিলেন তখন তিনি তার আবিষ্কার হাডসন নদীতে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছিলেন। সেখানে নিরাশাবাদী লোকজন জড়ো হয়ে বলাবলি করছিল, ইঞ্জিন আবিষ্কার করলে কি হবে এই জাহাজ কোনদিন পানিতে চলবেনা। দেখা গেল জাহাজ চলছে এবং নদী দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যারা জাহাজ চলবেনা মন্তব্য করছিল তারা এবার বলতে লাগলো জাহাজ কখনও থামবেনা। কিন্তু জাহাজ থেমেছিল। সবকিছুকে নেতিবাচক দেখার কি আশ্চর্য মানসিকতা! কিন্তু এই নিরাশাবাদী মানুষগুলো অবলীলায় ভুলে যায় যে, একটি নষ্ট ঘড়িও দিনে দুইবার সঠিক সময় নির্দেশ করে।
সর্বোপরি এটুকুই বলতে চাই "যা দেখা যায় তার সব সত্যি নয়, যা দেখা যায়না তার সব মিথ্যে নয়"

লেখক : এইচ.এম.ইমরান

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন